ফতুল্লা প্রতিনিধি সবুজ মাহমুদ : সরকারকে অবশ্যই ভেজালের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। নিম্নবিত্ত মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে না যায়- সেদিকে সরকারের কঠোর দৃষ্টি রাখা নৈতিক দায়িত্ব।
পৃথিবীর প্রত্যেক প্রাণী খাদ্য ছাড়া বাঁচতে পারে না। যার প্রাণ বা জীবন আছে তার খাদ্যের প্রয়োজন। মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণী যারা প্রকৃতির কোলে লালিতপালিত তারা কখনো খাদ্যে ভেজাল দেয় না। কিন্তু সৃষ্টির সেরা মানুষ খাদ্যে ভেজাল দেয়। মানুষকে বিষাক্রান্ত করে একটি লোভ ও অতিরিক্ত অর্থের বাসনা। তাই বর্তমান ভেজালমুক্ত খাদ্যের বড় অভাব। আমাদের জন্য সুস্থভাবে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ভেজালমুক্ত খাদ্য যেন সোনার হরিন,আমাদের দেশে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী রয়েছে যারা পেঁয়াজ, রসুন ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, বুটের এক ধরনের সংকট তৈরি করে। মজুদ রেখে পণ্যের দাম বাড়ায়। কারণে পণ্যের দ বেশি দামে পণ্য সামগ্রী কিনতে বাধ্য করে। বলা যেতে পারে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি এক ধরনের অস্থিরতা দেখা দেয় বিশেষ করে নিম্নবিত্তদের ভোগান্তি দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।
বেশি দামেই পণ্য সামগ্রী কিনতে হয়। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ হয় না। মোটা দাগে বলা যেতে পারে, যারা পণ্যসামগ্রী মজুদ রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মূল্য বাড়ায় অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে এখানেও সুশাসনের অভাব। সরকার কার্যত তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না। অথচ ভেজালমুক্ত খাদ্য ভোক্তার অধিকার। কিন্তু সে অধিকার থেকেও ভোক্তা বঞ্চিত হয়। সারা দেশে ভেজালবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বর্তমান নৈতিক অবক্ষয়ের যুগে শুধু খাদ্যে ভেজাল নয়- চারদিকে চলছে ভেজালের কারবার। আমরা ভেজারের মধ্যে বাস করছি, ভেজালের মধ্যে ডুবে আছি। কোথায় ভেজাল নেই বলুন। খাদ্যে ভেজাল, চালে ভেজাল, ভেজাল বিভিন্ন মৌসুমী ফল আম, জাম, লিচু, কলা, আনারস, প্রভৃতি ও শাক-সবজিতেও ভেজাল। এ প্রসঙ্গে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি, আমি গত বছর আমার স্থানীয় বাজারে কিছু ফলমূল কিনতে যাই। কয়েকজন ফল বিক্রেতা অপরিচিত বলে মনে হলো। একজন ফল বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করলাম, খবর কি? তিনি আমার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে বলল, ভাই আপনি যেই হোন না কেন, সত্যি কথা হলো ফরমালিন মেশানো ছাড়া কোনো ফল পাবেন না। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম তোমার কলায় তো মেশানো নেই। মেশানো আছে তবে অল্প। আমি বেশি করে মেশাই না। অন্যান্য সবাই আমার চেয়ে বেশি মেশায়। আমি বুঝতে পারলাম লোকটি হয়তো প্রকৃতপক্ষে সত্যি কথাই বলছে। ফরমালিন ছাড়া কোনো খাদ্যদ্রব্য, ফলমূল পাওয়া দুষ্কর এ যদি আমাদের বাজারের বিভিন্ন জিনিসে ভেজাল হয় ফরমালিন মেশানো হয় তাহলে প্রতিনিয়ত আমরা কি খাচ্ছি। খাদ্যে ভেজাল ব্যাপারটি আমাদের সমাজের ক্ষেত্রে একটি স্বাভাবিক বিষয়। এ নিয়ে আমরা খুব একটা চিন্তা-ভাবনা, মাথা ঘামায় না। মাঝেমধ্যে অবশ্য ভেজালবিরোধী অভিযানের খবর সংবাদপত্রে দেখতে পাই। আসলে আমাদের নৈতিক চরিত্রের এতটা অধঃপতন হয়েছে যে, ভেজালের নেতিবাচক দিকের কথা আমরা মনে করি না। মানুষের চরম ক্ষতি করছে ভেজালকারীরা। অথচ মানুষ শ্রেষ্ঠ জীব। ধ্যানে, জ্ঞানে, শিল্প-সাহিত্যে, বিজ্ঞান-দর্শনে মানুষের সমকক্ষ আর কোনো প্রাণীই নেই। কিন্তু মানুষ যত সভ্যতার সংস্পর্শে গিয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে মানুষ তত বর্বর অসভ্য হয়েছে। যুগের পরিবর্তন হয়েছে বিশ্ব সভ্যতা এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমরা নিজেদের সভ্য হিসেবে গড়ে তুলতে পারিনি। অথবা বলতে পারি সভ্যতার ভালো দিকগুলো আমরা গ্রহণ করিনি। কারণ সভ্যতা মানুষকে ভালো হতে শেখায় উন্নত হতে শেখায় মানুষকে পরিশুদ্ধ করে। কিন্তু তার উল্টো স্রোতে আমরা চলছি। খাদ্যে ভেজাল মেশানো তার একটি দিক। শুধু শহর, বন্দর বা উপশহরই নয়- আজকাল গ্রামগঞ্জেও ভেজালের কারবার। সভ্যতা যতই এগিয়ে গেছে ততই সর্বত্র ভেজালের সর্বব্যাপী প্রসার ঘটেছে। একবিংশ শতাব্দীকে বলা হয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষের যুগ। তবে অপ্রিয় হলেও সত্য মনুষ্যত্ববোধ মানবিক জ্ঞানসম্পন্ন পরিপূর্ণ মানুষের অভাব রয়েছে। আমরা ব্যক্তিগত লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠতে পারিনি। ফলে প্রতিনিয়ত সমাজের অধিকাংশ মানুষ আজ বিভিন্নভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছে। আমাদের মানবিক মূল্যবোধ ও সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে সমাজটা এমন একপর্যায়ে গিয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়েছে।
অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে, বাজারে যে কোনো ফল সেটা দেশি বা বিদেশি যাই হোক না কেন মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত কার্বাইড যা মানব দেহে অত্যন্ত ক্ষতিকর। এমনকি এসব ফলফলারি পচন রোধে স্প্রে করা হচ্ছে ফরমালিন। যে কোনো পচনশীল খাদ্য দ্রব্যে মেশানো হচ্ছে ফরমালিন। জীবনধারনের জন্য খাদ্য আবশ্যক। আমাদের ৫টি মৌলিক চাহিদার মধ্যে খাদ্য অন্যতম। খাদ্যই যদি বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন হয় তাহলে যেসব খাদ্যদ্রব্য প্রয়োজন যার মধ্যে কোনো ভেজাল নেই।