Probhat Barta

বৃহস্পতিবার, ১৪ই নভেম্বর, ২০২৪, রাত ১১:১৪ মিনিট

অনুসরণ করুনঃ

নিম্ন-মধ্যবিত্তের অসহনীয় কষ্ট



অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। তেল, আটা-ময়দা, মাছ-মাংস ও সবজিসহ একাধিক নিত্যপণ্য কিনতে ভোক্তার নাজেহাল অবস্থা। এর মধ্যে বেশি ভোগাচ্ছে কোনো কারণ ছাড়াই চালের লাগামহীন বাড়তি দাম। এর নেপথ্যে সিন্ডিকেটের থাবাকেই দায়ী করা হচ্ছে।

গত এক মাসের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে ৭-১২ টাকা। রাজধানীর খুচরা বাজারে এক কেজি মোটা চাল বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৫৮ টাকায়। পাশাপাশি ভালোমানের সরু চাল বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকায়। এতে সব শ্রেণির ক্রেতার নাভিশ্বাস বাড়ছে। বিশেষ করে অসহনীয় কষ্ট পোহাচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের পরিবার। 
বুধবার রাজধানীর কাওরান বাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার ও নয়াবাজারে সরেজমিন ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করে পাওয়া গেছে এমন চিত্র। 

বুধবার সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক পণ্যমূল্য তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রতি কেজি মোটা চাল এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। মাঝারি আকারের চালের দাম মাস ও বছরের ব্যবধানে ৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেড়েছে। আর মাসের ব্যবধানে সরু চালের দাম ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ ও বছরের ব্যবধানে ১৩ দশমিক ২৮ শতাংশ বেড়েছে। এর আগে কখনোই চালের দাম এভাবে বাড়েনি।

পণ্যমূল্যের কথিত সিন্ডিকেট মাঝে মধ্যেই এক একটি পণ্যকে বেছে নিয়ে এর দাম বাড়াচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় এমন সব পণ্যের দামই তারা বেশি বাড়ায়। এর আগে সয়াবিন তেল, ডিমের দাম বাড়িয়েছে। এখন তাদের নজর পড়েছে চালের বাজারে। সরকারের পক্ষ থেকে খুচরা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হলেও সিন্ডিকেটের মূল নায়কদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। অথচ সরকারের একাধিক সংস্থা এদের তালিকা করে উচ্চ পর্যায়ে দিয়েছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে চাহিদার চেয়ে চালের মজুত ও সরবরাহ বেশি রয়েছে। এছাড়া চালের দাম এত বেশি মাত্রায় বাড়ার মতো কোনো কারণও ঘটেনি। কেবল গত ৬ আগস্ট জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে প্রতি কেজিতে সর্বোচ্চ ৫০ পয়সা বাড়তে পারে। কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার আগে থেকেই চালের দাম কোনো কারণ ছাড়াই লাগামহীনভাবে বেড়ে আসছিল। গত এক মাসের ব্যবধানে গড়ে চালের দাম ৭ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।।

এদিকে চালের দাম কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে ১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। আমদানি ব্যয় কমাতে গত ২৪ জুন কর হার ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। তারপরও সামান্য পরিমাণে চাল আমদানি করা হয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তরের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদন বলছে, গত ১ জুলাই থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত দেশে ৩২ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়েছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারেও চালের দাম কমেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থার (ফাও) তথ্য মতে, ২০২২ সালের মার্চে খাদ্য খাতের সূচক বেড়ে সর্বোচ্চ ১৫৯ দশমিক ৭ পয়েন্টে দাঁড়ায়। এর পর থেকে কমতে থাকে। এপ্রিলে সামান্য কমে ১৫৮ দশমিক ৪ পয়েন্ট, মে মাসে আরও কিছুটা কমে ১৫৭ দশমিক ৯ পয়েন্ট হয়। জুনে তা আরও কমে ১৫৪ দশমিক ৩ পয়েন্ট, জুলাইয়ে তা আরও কমে ১৪০ দশমিক ৯ পয়েন্টে দাঁড়ায়।

কিন্তু দেশে চালের দাম বাড়ছেই। যদিও দেশের চালের বাজার আমদানিনির্ভর নয়।মানুষ মোট ব্যয়ের মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি খাদ্য খাতে ব্যয় করে। এর মধ্যে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের চাল কিনতেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হয়। যে কারণে চালের দাম বাড়লে এসব মানুষের ভোগান্তিও বেশি বাড়ে।

রাজধানীর কাওরান বাজার, মালিবাগ বাজার ও নয়াবাজারে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা বিক্রি হয়েছে ৫৫-৫৮ টাকায়, যা জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির আগে ৪৫-৪৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার পণ্যমূল্য তালিকায়ও মোটা চালের কেজি সর্বোচ্চ ৫৮ টাকা উলে­খ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিকেজি বিআর ২৮ বিক্রি হয়েছে ৬০-৬২ টাকায়, যা আগে  ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিকেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৭০-৭৫ টাকা, যা আগে ৬৮-৭২ টাকা ছিল। নাজিরশাইল মানভেদে প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ৭৭-৯০ টাকায়, যা আগে ২-৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

রাজধানীর কাওরান বাজারে চাল কিনতে আসা মো. রিয়াদুল বলেন, বাজারে অন্য সব পণ্যের সঙ্গে চালের দাম হু-হু করে বাড়ছে। চাল জোগাড় করতেই তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারণ দেশের মানুষের প্রত্যেক দিন ভাত খেতে হয়। আর এই চাল যদি কেজিপ্রতি ১০-১২ টাকা বেশি দরে কিনতে হয়, তাহলে আয়ের অর্ধেক টাকা চালের পেছনেই ব্যয় হয়ে যাবে। একবার চিন্তা করে দেখেন মোটা চালের কেজি প্রায় ৬০ টাকা। আর সরু চাল কিনতে দীর্ঘনিঃশ্বাস নিতে হচ্ছে। এমন অবস্থার শেষ কোথায়।
তিনি বলেন, বাজারে চালের কোনো সংকট নেই। যে পরিমাণে চাচ্ছি সে পরিমাণেই কিনতে পারছি। কিন্তু বেশি দাম। তাহলে  বোঝা যাচ্ছে এর মধ্যে কোনোরকম কারসাজি আছে। তা না হলে চালের দাম বাড়বে কেন। তাই কারসাজি রোধ করে আমাদের মতো ভোক্তাদের একটু স্বস্তি দিতে চালের বাজারে কঠোর মনিটরিং করতে হবে।

রাজধানীর কাওরান বাজারের আল মদিনা রাইস এজেন্সির মালিক সিদ্দিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘দেড় মাস আগে মিলারদের কারসাজিতে চালের দাম বাড়তে শুরু করলে সরকারের পক্ষ থেকে ১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু ডলারের দাম বাড়ায় ভারত থেকে আমদানি করা চালের দাম দেশের চালের তুলনায় বেশি। তাই মিলাররা আবারও সুযোগ নিচ্ছে। আমদানি করা চালের সঙ্গে সমন্বয় রেখে মিল পর্যায় থেকে দেশি চালের দামও কেজিতে ৪-৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর পরিবহণ খরচ বাড়ার অজুহাতে মিল পর্যায়ে প্রতিকেজি চালের দাম আরও ৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এ কারণে পাইকারি পর্যায়ে চালের দাম বেড়ে গেছে।

পরিবহণ খরচের কারণে চালের দাম বাড়লে আমাদের বাড়ানোর কথা। কিন্তু মিলাররা কীভাবে পরিবহণ খরচের দোহাই দিয়ে চালের দাম বাড়াচ্ছে।
মালিবাগ কাঁচাবাজারের খালেক রাইস এজেন্সির মালিক দীদার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, কে বা কারা চাল নিয়ে কারসাজি করে ত

About The Author

শেয়ার করুন :

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সম্পর্কিত: