কেঁপে ওঠে আত্মা
জীবনের সব মরদানির অহংকার
আত্মম্ভরিতার দুঃসাহস যেন বজ্রপাতে আহত পাথুরে ঢিবির মত ফেটে খানখান হয়ে যায়,
ভেজা ঘাস আগুনের জ্বালা লেগে যেমন করে পোড়ে আর ধোঁয়া ছড়ায়।
জীবনের স্বপ্ন আর আশাগুলিও তেমনি করে পুড়ে যাচ্ছে আর ধোঁয়া ছড়াচ্ছে
অলস অসহায় ও ভীরু একটা অবসাদের মধ্যে নেতিয়ে পড়া একটা গলার স্বর-
তবে আর দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
প্রাণময় অসাড় একটা দেহ নিয়ে শুধু তাকিয়ে দেখতে থাকা
মড়াটে চেহারা নতুন রক্তের ঝলক লেগে তপ্ত হবার নিস্ফল আশায়
বেপরোয়া হয়ে উঠতে চায়;
কিন্তু শরীরের সব রক্তমাংস যে জানে এটা আর হবার নয়,
কোমরের একটা নিবিড় ব্যথাও যে বিশ্বাস করে, একটুও মিথ্যে নয়।
নেশার ঘুমের চেয়েও বেশি নিরেট একটা অবসাদের ঘোরে চোখের পাতাগুলি নেতিয়ে পড়ে
হিসেব করে সময় কাটে, আর কতক্ষণ লাগবে?
আত্মার সাথে শরীরের সম্পর্ক,
খাঁচায় বন্দি পাখি যেন
পালানোর জন্য একটু বেশিই তাড়াহুড়ায় আছে।
কানার হাটবাজার থেকে বেহুদা প্যাঁচাল-
বড় আক্ষেপ আর ব্যাকুলতা নিয়ে চিৎকার করে ভিতরে বয়ে চলা অতৃপ্ত আত্মা বলে- ফিরে চল, ফিরে চল; বিংশ শতাব্দীর এই কলঙ্কিত আসর থেকে ফিরে চল। মুঢ় সভ্যতার শিরার শিরায় বয়ে চলা রক্ত পাগল হয়ে উঠেছে। এ সভ্যতার উন্মাদনার তৃষ্ণা শান্ত হয়তো হবে, তবে সেটা ছিন্নমন্তার মতো নিজের শেষ রুধিরকণা পান করে। সভ্যতার অতিকায় সিন্দুকে কি না আছে? জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিশালতা, ক্ষুরধার বুদ্ধিমত্তা; কিন্তু সব কিছুই মারণ কীর্তির উৎসাহে উদ্ভ্রান্ত, উদগ্রীব। কালে কালে অতিকায় হয়ে উঠেছে এই ফ্রাঙ্কেনস্টাইন। বর্তমান সমাজযন্ত্রের কর্ণধারেরা একজন নিরন্নের অস্থিসার দেহে এক সের মাংস-গোস্তের ব্যবস্থা করতে পারে না, অথচ তারাই অস্থিসার মানবদের নিয়ে ফ্রন্টে ফ্রন্টে রাজনীতির জুয়া খেলছে। পৃথিবীর মানচিত্রের ওপর তাদের দাবার ঘুঁটি চলছে অহর্নিশ। স্থল, জল, অন্তরীক্ষ, কীটপতঙ্গ, এমনকি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া পর্যন্ত উত্যক্ত হয়ে উঠেছে প্রমত্ত মানুষের কদাচারে। ওরাও প্রতিশোধের তীব্র দহনে ঝাঁপিয়ে পরছে মানুষের উপর।
চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে- ফিরে চল এই বারুদের ধোঁয়া, মাইন-টর্পেডো, বোমা, ট্যাঙ্ক, মেশিনগান, ভেজালে ভেজালে আচ্ছন্ন বিকৃত ক্ষাত্রবীর্যের তাণ্ডব থেকে। সুদূর অতীতের ‘অরণ্য’ প্রচণ্ড আক্ষেপে তার সন্তানদের ডাকছে।
কিন্তু, পিছনে ফেরার পথটা যে সৃষ্টিকর্তা রুদ্ধ করে রেখেছেন। আশাক্ষুন্ন পথিকের মতো উত্তপ্ত জীবনের পানে শুধুই এগিয়ে চলা- অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের পথে।”