আমাদের জীবনাচরণে আমরা আন্তরিকভাবে মধুরতাকে কামনা করি। ওনার স্বভাব মধুর, দৃষ্টি মধুর, ছেলেটির হাসি কি মধুর! জীবনের যত প্রাপ্য ও কাম্যের প্রকৃতিকে অজস্র ভাষা দিয়েও
যখন বুঝিয়ে উঠতে পারি না, তখন একটি মাত্র উপমা দিয়েই সেটা প্রকাশ করতে পারি- মধুর! যুগ যুগ ধরে আমরা যে এগিয়ে চলেছি তার প্রাপ্তি ও আনন্দ একমাত্র মধুর সঙ্গেই তুলনীয়।
ইদানিং মধু সম্বন্ধে একটা চরম উদাসীনতা আশঙ্কার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে ছিল না, এটা বর্তমানের লক্ষণ। এই লক্ষণটা পরোক্ষভাবে আমাদের বর্তমান সমাজের দীনতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। স্যাকারিন, ফরমালিন আর মারন দ্রব্যের-উপাসনার যুগে আমাদের এ ভুলটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। এ ভুল বড় ভয়ংকর ভুল!
বাঁদর বাবুই পাখির বাসা ছিঁড়ে ফেলে দেয়। যে উন্নত জৈবিক প্রবৃত্তির টানে বাবুই পাখি শিল্পী হতে পেরেছে, বাঁদরের তা নেই। বানরীয় সভ্যতায় তাই বাবুই পাখির বাসার কোন মূল্য নেই। সেটা সম্পূর্ণ অদ্ভূত এবং নিষ্প্রয়োজনীয়। তাইতো ডারউইন এর যুক্তিহীন ও পরিত্যক্ত বিবর্তনবাদ শেখা আমাদের সন্তানদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
বাস্তবিকেরা হলেন প্ল্যানার। তাঁরাও সোনার বাংলাকে গড়ে তুলতে চান। প্ল্যানারের চোখে স্বপ্ন নেই, প্ল্যানারেরা রূপবাদী নন। একথা বললে অন্যায় হবে। অন্যায় কথাটা বলতেই হবে- কারন সময়টা এখন বানরীয়। ওরা উন্নয়ন করতে বাবুই পাখির বাসা ভাঙবে। পারলে গাছটাকেই উল্টে ফেলে দেয়- এই আর কি!
ছেঁড়া লুঙ্গি আর বহুবর্ষ পুরনো চাদরে আবৃত বৃদ্ধের পাশে বসে চা খাচ্ছিলাম। কথায় কথায় বন্ধু বললেন- যেভাবে দেশের উন্নতি হচ্ছে, তাতে আগামী ২০২৮ সালের মধ্যে দেশে কোন গরীব থাকবে না। হয়তো কাছাকাছি থাকায় বৃদ্ধের তীক্ষ্ণ, অগ্নিঝরা দৃষ্টিটা অনুভব করতে পারছি। কারো অনুমতির অপেক্ষা না করে কণ্ঠে ঝাঁঝ নিয়ে বললেন- ঠিক বলেছ বাবা, ২০২৮ সালে তুমি, আমি, আমরা থাকি আর না থাকি, দেশে কোন গরীব থাকবে না। হাজারপতিরা লাখপতি হবে, লাখপতিরা কোটিপতি হবে, কোটিপতিরা বিশ্বের সেরা ধনী প্রতিযোগিতার তালিকায় উপরের দিকে উঠে যাবে। আর শালা ফকিন্নির পুতেরা সব মরে ভুত হয়ে যাবে। ভুত তো আর গণনায় থাকবে না। অতএব দরিদ্র আর দারিদ্রতাহীন ধনী বাংলাদেশ হবে এভাবেই। কাঙ্গালের বাচ্চারা মরবে তবেই না এমন ধনী দেশ হবে!
চাচা, আপনার কথাটা মানতে পারলাম না ………।
মানতে পারবে না সেটা আগেই জানি। দলান্ধ হয়ে কোনকিছুতেই স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবে না। বিবেক খোঁচাখুঁচি করলেও সেটা দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে অনেক সত্য কথাতে আপত্তি করবে। দাঁত খিঁচিয়ে, চোখেমুখে বিপ্লবী ভাব ফুটিয়ে তোলাতে তোমাদের মত দলান্ধদের মত ওস্তাদ মানুষ তাবৎ দুনিয়াতে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। দলান্ধ হবার কারনে তোমরা কারো ভাল-মন্দ একসাথ করে কালো বলেই চালিয়ে দিতে চাও। ১৯৭১ সালের পর থেকে যে যেভাবেই ক্ষমতায় আসুক না কেন দেশের উন্নতির জন্য কিছু না কিছু করে গেছে। একটা উদাহরণ দেই, এই যে এরশাদকে স্বৈরাচারী উপাধি দিয়ে সেটাকে পুঁজি করে একসময়, এমনকি এখনও সেটা ভেঙ্গে খাও, সেই এরশাদ সাহেব যদি ডিএনডি বাঁধ না করতো আজও তোমরা সারা বছর আড়াই হাত পানির নীচে ডুবে বেঁচে থাকতে। স্বৈরাচারী উপাধি পাবার জন্য দরকারি অনেক আকামই ওনার দ্বারা হয়েছে এটা অতি সত্য কথা। তাই বলে ওনার ভাল কাজগুলিকে কেন উপেক্ষা করবে?
চাচা, ক্ষুদ্র কিছু ভালো কাজের চাদরে সামগ্রিক ব্যর্থতাকে তো আর ঢেকে দেয়া যায় না!
অবশ্যই না। তাই বলে ভালো কাজগুলিকে তো আর অস্বীকার করতে পার না।
জ্বি চাচা, তা ঠিক।
আসলে বর্তমান সরকারও অনেক ভালো কাজ করছে। আমি দরিদ্র, নিম্ন বিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত, ডিজিটাল বাংলাদেশ, উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ এসব কিছুই বুঝিনা, বুঝতে চাইনা। এইসব চিত্র যতদিন তোলা হবে ততোদিন বঙ্গবন্ধুর কথাটাই বলে যাবো- “আমি যদি বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে না পারি, আমি যদি দেখি বাংলার মানুষ দুঃখী, আর যদি দেখি বাংলার মানুষ পেট ভরে খায় নাই, তাহলে আমি শান্তিতে মরতে পারব না। বাংলার উর্বর মাটিতে যেমন সোনা ফলে, ঠিক তেমনি পরগাছাও জন্মায়! একইভাবে, বাংলাদেশে কতকগুলো রাজনৈতিক পরগাছা রয়েছে, যারা বাংলার মানুষের বর্তমান দুঃখ-দূর্দশার জন্য দায়ী।”
তোমাদের সরকার কি বঙ্গবন্ধুর মত করে সার্বজনীন চিন্তা করছে? অবশ্যই না। দেশে যত ব্যবসাক্ষেত্র দেখ, যত কর্মসংস্থান বা ক্ষুন্নিবৃত্তির জন্য করা কাজ বল, সবই নির্দিষ্ট কিছু লোকের হাতে তুলে দিয়েছ এই সরকার। তোমাদের কর্মযজ্ঞের কোন খাতটা সম্পূর্ণ কলঙ্কমুক্ত? ক্ষুধার্ত আর উপেক্ষিত মানুষেরা কি স্বপ্ন বুনে? আদৌ কি স্বপ্নের জাল বুনে? খুব জানতে ইচ্ছে হয়। তোমরা কি সেটা জান? যেহেতু ক্ষমতায় তোমরা, তোমাদের সেটা জানা অত্যাবশ্যক কর্ম। ফকিন্নির পুতদের স্বপ্নের জাল দেখার সময় কোথায় তোমাদের?
নতুন নেতৃত্ব আনতে গিয়ে ওদের প্রশিক্ষণের প্রথম ধাপটায় কি রেখেছ?
বন্ধু কিছু একটা বলতে গেল। তিনি সেই সুযোগ না দিয়ে বলতে লাগলেন- রাখো, তোমার বলার দরকার নেই, আমিই বলছি- নতুন নেতৃত্বের প্রশিক্ষণের প্রথম পাঠ হচ্ছে ছোট-বড় ভেদ না করে কিভাবে সবাইকে নিংড়ে নিংড়ে টাকার পাহাড় গড়তে হয়। এবার দুই চোখ খুলে আমার দিকে তাকিয়ে বল- কথাটা কি মিথ্যা?
যার কাছে উত্তর চাওয়া হলো, সে মাথা নিচু করে বসেই আছে।