প্রভাত বার্তা : ১৯৭১সালের ২৯ই নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার বক্তাবলী পরগণায় পাক হানাদার বাহিনী নির্মম নির্যাতন করে একশত উনোচল্লিশ জন কে হত্যা করে। জ্বালাও পোড়াও করেন বাইশটি গ্রাম।স্বাধীনতা যুদ্ধে এক সাথে নারায়ণগঞ্জ জেলায় এত প্রানের বিয়োগান্ত ঘটনা দ্বিতীয়টি আর নেই।স্বজন হারানো ব্যথা নিয়ে প্রতি বছর শ্রদ্ধার সাথে বক্তাবলী শহীদ দিবস হিসেবে পালিত হয় ।
বক্তাবলী পরগণা একটি চরাঞ্চল এলাকা।বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীর পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত হওয়ায় বক্তাবলী পরগণা ছিলো নিরাপদ স্থান।বক্তাবলী পরগণা নিরাপদ থাকায় মুক্তিবাহিনী ঘাটি করে সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতেন।
২৮ই নভেম্বর পাক হানাদার বাহিনী সংবাদ পেয়ে যান বক্তাবলী পরগণায় মুক্তিবাহিনী ঘাটি করে সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাক হানাদার বাহিনীর ঘাটিতে আক্রমণ করে যাচ্ছে। সেই সুবাদে পাক হানাদার বাহিনী বক্তাবলী পরগনায় আক্রমণ করার প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে আসে বক্তাবলী পরগণার কুড়ের পার গ্রামে শুরু হয়ে যায় পাক সেনা আর মুক্তি বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ আর সেই যুদ্ধে পাক সেনারা পরাজয় বহন করে পিছু হটে যায়।কয়েকজ নিহত হয় পাক সেনা রাতেই মুক্তিবাহিনী ফিরে যায় নিরাপদ স্থানে।
২৯ই নভেম্বর ভোরে বক্তাবলী পরগণায় অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আক্রমণ করে পাকহানাদার বাহিনী। পাক হানাদার বাহিনী মুক্তি সেনাদের না পেয়ে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, ধরে নিয়ে যায় একশত উনোচল্লিশ জন নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ।অমানুষিক নির্যাতন চালায় শিশু থেকে বৃদ্ধ আর নারীদের উপর।ধরে নেয়া নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ গুলো কে ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে লাইন করে দাঁড় করিয়ে বেয়নেট দিয়ে আঘাত করতে থাকে একের পর এক অমানুষিক নির্যাতন করার পর ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করা হয় একশত উনোচল্লিশ জন নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ কে।
এতে নিহত হন শহীদ, ফারুক,অহিদ, মনির, শাহ্ আলম,রহমত উল্লা,শামসুল, আলম, সালামত খন্দকার,সুফিয়া,আম্বিয়া,খোদেজা সহ একশত উনোচল্লিশ জন।পাকহানাদার বাহিনী বক্তাবলী পরগণা বাসীর উপর অমানবিক তাণ্ডবলীলা শেষ করে চলে যাবার সময় পেট্রোল ও গান পাউডার দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় গোপাল নগর, রাজাপুর, লক্ষীনগর, ডিগ্রিরচর, মুক্তারকান্দি,গংগানর,রাধানগর সহ বাইশটি গ্রাম,অসহায় সম্বলহীন হয়ে পড়েন বক্তাবলী পরগণার সাধারণ মানুষ।
সেই ১৯৭১ সাল আজও নারায়ণগঞ্জ জেলার বক্তাবলী পরগণার সাধারণ মানুষ ভুলতে পারেনি পাক হানাদার বাহিনীর তাণ্ডবলীলা, ভুলতে পারেনি একশত উনোচল্লিশ জন শহীদের আত্নত্যাগের কথা। আজও নারায়ণগঞ্জ জেলার সর্বস্থরের তথা বক্তাবলী পরগণার সাধারণ মানুষ স্বাধীনতার ৫১বছর যাবত ২৯শে নভেম্বর কে যথাযোগ্য মর্যাদায় বক্তাবলী শহীদ দিবসকে শোকের দিন হিসেবে পালন করে আসছে।